সরস্বতীর চিঠি
সরস্বতী,
এই যে দিনরাত্রি যাচ্ছে পেরিয়ে,খোঁজ কি রাখিস তার? তুইও সেদিন বলেছিলিস,চেস্টা করে দেখতে একবার। করেছি,আমি করেছি চেস্টা বারবার। পিছু ফিরে যখন দেখতে গেলাম আবার,দেখি আমি তো সেই আগের আমি নাই। আসলে কিছুই নাই আমার!!
কিছুমিছু হয়তো ছিলো একসময়। আমার দারুণ ভয় হয়,কিছুমিছু হয়তো আর ফিরে আসবেনা। আকাশের মেঘও হয়তো বজ্রপাতে আর কাশবেনা,জানবেনা একরাশ বৃষ্টি হয়ে কিভাবে মাটিতে পরতে হয়। মাটিতে পরে তোর গায়ে লাগতে হয়। ওদেরও হয়তো ভয় হয়,তুই বোধহয় তোর নয়!!
তুই তোর নস,আমি আমার নই। আমাদের গল্পগুলান তাইলে কই? এইযে চিঠি তুই পড়ছিস,এই চিঠি লেখার তীব্র যন্ত্রণাও হতে পারে বিষাদ ভরা সুন্দর কোনো গল্প। তুই জানিস সরস্বতী? এই সুন্দর গল্পের সময়টা ভীষণ অল্প। এই অল্প সময়ে আমি শুনতে পাচ্ছি ভোরের আজান,হয়তো সূর্য উঠি উঠি তে তুইও মাড়াবি তোর ফুলের বাগান। কয়েকটা ফুল ছিঁড়ে আয়োজন করবি পূজোর। তোর পূজোর আয়োজনে পেরিয়ে যাবে ভোর। হয়তো ভোরের শিশির ভেজা ঘাসে ভিজবে তোর পা,ততক্ষণে হয়তো নামাজ পড়ে ক্লান্তিতে আমি এলিয়ে দিয়েছি গা। ছোট্ট একটা গল্প তো এটাও হতে পারে,পারে না? পারে বৈ কি,আমরা আমাদের পুরো গল্পটাই তো এখনও জানি না!!
সরস্বতী,সব কথা জানতে নেই,জানতে গেলেও মানতে নেই। মানতে গেলে দিন গড়িয়ে রাত পেরিয়ে যায়। কি লাভ মানার বোঝা ঘাড়ে নিয়ে হাঁটতে পারায়? তারচেয়ে বরং মেঘেদের দিকে তাকা। দেখবি তৃষ্ণা নিয়ে তোর দিকে তাকিয়ে আছে তারাও। তুই যখন রং তুলির আঁচড় কেটে তৈরি করিস সেসব মেঘের দল, আমি জানি তখনও তোর চোখের কোণায় জ্বলজ্বল করছে কয়েক বিন্দু জল। এই জলের হিসেব আমি তোর হয়ে ঈশ্বরের কাছে চাইবো। প্রয়োজনে হেঁড়ে গলায় চিৎকার করে গাইবো-
"তুমি আমায় সব দিয়েছো,
দিয়েছো কস্ট সওয়ার ভার;
তাই আমার চোখে আমার জল,
আমার অধিকার।"
ধুর ছাই!! আমার হেঁড়ে গলা ঈশ্বরের পছন্দ হবে না। তার চেয়ে বরং তুই ই গা,তোর দেবী স্বরের স্বাদ নে। বলতে পারিস আমি তোর গলা ভারী পছন্দ করি,যদিও একবারই শুনেছি সে গলা। ভারী মিস্টি!! সত্যি বলছি তোর হাত ছুঁয়ে,সন্ধ্যের ফুল যেমন পরে নুয়ে,ঠিক তেমন করেই স্বীকার করছি অকপটে। প্রশংসা বেশি হচ্ছে বটে,কিন্তু যা সত্যি তা ই রটে। তোর বিশ্বাস না হলে আমি দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার টানিয়ে দিতে রাজি আছি সত্যি। যদি মিথ্যে বলে থাকি একরত্তি,আমার এই চিঠি নিয়ে কোনো আদালতে মামলা ঠুকে দিস।
মামলা যদি ঠুকতেই হয়,তাহলে তোর বিরুদ্ধেও ঠুকিস। কেননা যন্ত্রণার ভাগীদার তুইও। নিজের বিরুদ্ধে তোর নিজের যুদ্ধে কেউ ছিলো না। আসবেই বা কোথা থেকে? বোঝার মতো যে কেউ ছিলো না তোকে।
সরস্বতী,বলেছিলিস কি নাম দিয়েছি তোকে। আশা করি পেয়ে গেছিস নাম টা চিঠি পড়ার ঝোঁকে। জিজ্ঞেস করতে পারিস,এই নাম টা দেয়ার কারণ? উত্তর হচ্ছে,আমি মানি না কোনো বারণ। যে শব্দগুলো মন থেকে আসে,সেগুলো সম্মান বহন করে। যতই ভাঙুক ঝড়ে,নামগুলো রয়েই যায় অন্য নামের পরে।
যদি চাস এই নাম দেয়ার ব্যাখ্যা,আমি দিতে চাইবো কিছু বাক্যময় আখ্যা। হতে পারে সেটা তোর মুখচ্ছবি আমার কাছে লাগে হুবহু দেবী সরস্বতীর প্রতিমা। হতে পারে তোর গানের স্বর কিংবা তোর রং তুলির আঁচড় দেবীর গুণের উপমা। হতে পারে তুই ধারণ করিস বিশুদ্ধ এক মন,যারে ধারণ করেছে অন্য দেবীদের কোনো এক জন। আমি জানি, তোর রয়েছে বিষাদময় কোনো এক অজানা রাগ,ঠিক যেন সরস্বতীর প্রতি গঙ্গার অভিশাপের কোনো এক ভাগ। কিংবা সরস্বতী দেবীর মতোই তুইও ভয় পাস মর্ত্যের লোকদের,যারা তীব্র লালসায় খন্ডাতে চায় তোর চাওয়াপাওয়াগুলো। তাই পাতালেই থাকতে চাস লুকিয়ে,যাতে না লাগে তোর গায়ে মর্ত্যের ধুলো।
কিন্তু, এই যে তুই আমার কাছে সরস্বতী,সত্যিই হয়তো তুই সেই পুরাণের কোনো চরিত্রের মস্তিস্ক থেকে হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি। সবকিছুই হয়তো মিথ্যা কিংবা সত্যি। হয়তো পুরোটাই মিথ্যা কিংবা পুরোটাই সত্যি। কি যায় আসে তাতে? আবারও দিনে সূর্য জাগবে,চাঁদ জাগবে রাতে। আমাদের অস্তিত্বও তাই ধ্রুব সত্য,তুই সরস্বতী,ব্যস,এটাই আমার নাম দেয়ার পেছনের তত্ত্ব।
অনেক বকবক করলাম। এবার কলম রাখা দরকার। সকাল হয়ে আসছে। একটু ঘুমিয়ে নিলে হয়তো আমারও উপকার। এমনিতেই ঘুমাইনি বহুদিন। আজকাল ঘুমও হচ্ছে ভালোই প্রতিদিন। আশ্চর্যজনক ব্যপার বটে।
নিজের যত্ন নিস,আর পারলে চিঠিরও উত্তর দিস। দাবী রইবে না উত্তর না দিলে। কারণ,সবাই দাবী রাখতে পারে না। দেবীদের উপর দাবী রাখা যায়ও না। তবে যাই ই হোক,ডাকতে হলে তোরে আমি এই নামেই ডাকবো,প্রয়োজনে দেয়ালে দেয়ালে পোস্টারেও লিখে রাখবো।
হয়তো বছরের পর বছর ঘুমোতে দেয়নাই অতন্দ্রী,হয়তো ভবঘুরের খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরতে চেয়েছিলাম,চলে গেছে তারপরেও সন্ধ্যাবতী। কিন্তু,তোর কাছে কিচ্ছু চাইছিনা। কারণ,তুই সরস্বতী!!
ইতি,
তুই জানিস আমি কে।
Comments
Post a Comment