টুনটুনির গল্প


বেশ,এবার "টুনটুনি" প্রসঙ্গে আসা যাক। উনি একজন মেয়ে। না,ইহা তার বাপের দেয়া নাম নয়,এমনকি তার ছদ্মনামও নয়। ইহা আমার দেয়া প্রেমের নাম। তার আসল নামটা সত্যি সত্যিই দারুণ সুন্দর..!! 

বছর-সাতেক হবে,বয়ঃসন্ধি গত হয়েছে। বয়ঃসন্ধিতে প্রথম প্রেমে পড়া,রেশ তো মরার আগ পর্যন্ত থাকবেই।

ভারী একখানা গায়ের রং,দুধে-আলতা। অতি মিষ্টি একখানা চেহারা। আকারে ছোট-খাটো বলে আদরে নাম দিলাম "টুনটুনি"। সে যেন ঠিক হাঁটতো না। পাখির মতোই লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়াতো।

আমার বেশ মনে পড়ে,মাস চারেক আমি একাগ্র দৃষ্টিতে ওর পিছু নিয়েছি। বিকেলে যখন আমার কোচিং শুরু হতো,তখন তার কোচিং শেষ হতো। আমি লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম তাকে। পাছে রটে যায়,শ্রেণীর প্রথম বালকের চরিত্রে দোষ..!! যদিও তারা এখনও চরিত্রহীন-ই ভাবে। সে যাই হোক,টুনটুনি বেশ পর্দানশীল ছিলো,তাই হয়তো আমার দূর্বলতাও বেশি ছিলো। ও যে বোরখা টা পড়তো,তা সচরাচর দেখাই যেতো না। আমার দারুণ পছন্দ ছিলো সেটি।

আমার চিত্তে,বিত্তে,নৃত্যে,কৃত্যে শুধু টুনটুনি। এমনকি তৃষ্ণাতেও দেখতাম,গ্লাসের পানিতে টুনটুনি দিব্যি হাত-পা ছিটিয়ে সাঁতার কাটছে।

ও পাখির সাথে কথোপকথন-ই হচ্ছে আমার জীবনে প্রথম কোনো মেয়ের সাথে কথা বলা। আমার বয়ঃসন্ধির কন্ঠস্বর,মেয়েলী হওয়াটাই স্বাভাবিক। টুনটুনি শুধোলো,আমার গলার স্বর আর কথা বলার ধরন টা নাকি ভারী মিষ্টি..!! বোধহয় সেদিনই প্রথম,নিজের সম্পর্কে একটা কিছু কোনো মেয়ের মুখ থেকে সরাসরি শুনেছিলাম।

সে বয়সের দিনগুলি অতি রঙিন হয়। যারা সে দিন পায়নাই,তারা আসলেই দুর্ভাগা। আমি সেক্ষেত্রে সৌভাগ্যবান।

টুনটুনি আমার থেকে মাস তিনেকের বড় ছিলো। ভারী একটা কতৃত্ব ফলতো তার কন্ঠে। সারাক্ষণ টুকুর টুকুর করে ফোনালাপ,লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা আর স্বাধীনতার কল্পনা খেলতো আমার মাথায়। না,তাকে প্রেমিকা কিংবা ভবিষ্যতের প্রিয়তমা হিসেবে চাইনি কখনো। শুধু দারুণ একটা টান অনুভব করতাম।

মনে পড়ে,টুনটুনি একদিন আমায় বললো,"আমি বোধহয় তোমার দিকে একটু বেশিই তাকিয়ে থাকি। দুঃখিত,আর তাকাবো না।" সে তাকানোর অর্থ আজ বুঝলেও তখন মাথায় ঢোকে নি।

মনে পড়ে,একদিন কোনো এক কারণে ওর ক'খানা বই আমার হাতে এসে পড়ে। আমি মলাট উল্টাতেই দেখি,তাতে কেউ 'টুনটুনি' শব্দ টা লিখে রেখেছে। বুঝেছিলাম,নামখানা কারো মনে ধরেছে।

সে বয়স,পরিবেশ আর পারিপার্শ্বিকতা যেন স্বর্গীয় ছিলো। ঘন কুয়াশা কেটে কেটে ভোর-সকালে যেতাম কম্পিউটার ক্লাস করতে। টুনটুনিও আসতো ক্লাশ করতে। ঠান্ডা হাওয়ায় ওর অতি ফর্সা মুখটা যেন ফ্যাকাশে হয়ে যেত। আমি চোখ বাঁকিয়ে বাঁকিয়ে তাকাতাম,চোখে চোখ পড়ে গেলে ঝট করে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতাম।

টুনটুনিকে ঘিরে হাজারো স্মৃতি আছে। অযথাই প্রচন্ড ঝগড়া,দারুণ অভিমান,সপ্তাহখানেক পর আবার সেই হুট করে কথা বলা। ও দারুণ খোঁচা মারা স্বভাবের ছিলো,আমি বেশ পছন্দ করলেও ভয়ে ভয়ে থাকতাম।
নাহ,সে বয়সের প্রেম আর প্রেমে পরিণত হয় নি। হঠাৎ করেই ঘটনার মোড় ঘুরে গিয়েছিলো। সে গল্প না হয় বাদ-ই থাক।

তবে সে দিনগুলি আসলেই স্বর্নরঙা ছিলো। কতগুলো নির্দিষ্ট গান,ডায়েরীর কিছু পাতা কিংবা কিছু অদ্ভুত পরিবেশ আমায় অতীতে নিয়ে যায়। আমি বুক ভরে শ্বাস নেই। নাহ,টুনটুনির গন্ধ আর বাতাসে ভেসে আসে না।

টুনটুনি আমার মুখবইয়ের বন্ধুতালিকায় আছে। হয়তো এই মুহূর্তেই গল্পটি পড়ছে আর মিটমিটিয়ে হাসছে। হয়তো গরু-গাধা সম্বোধনে ফোনটা ছুঁড়ে ফেলে দেবে। নাহলে হয়তো একটু পরেই বার্তা দেবে একগাল হাসি কিংবা একগাল গালিগালাজ নিয়ে।

বোধহয় না,সে গালি গায়ে মাখবে আমার। আমি যা বেহায়া..!!

বয়ঃসন্ধির ডায়েরী

Comments

পোস্টটির দর্শক সংখ্যা-

সমস্ত পোস্টের তালিকা-

অনলাইনে আছেন-

4k এর অধিক পাঠকের জন্য অগনিত শুভেচ্ছা। সাবস্ক্রাইব করতে পারেন-


Free Updates to your Inbox
Follow us:
facebook twitter gplus pinterest rss